বাংলাদেশে বেসরকারি নার্সিং কলেজে খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
বেসরকারি নার্সিং কলেজের জনপ্রিয়তা
বাংলাদেশে নার্সিং পেশার গুরুত্ব
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে এবং দেশের হাসপাতালগুলিতে দক্ষ নার্সিং কর্মী সরবরাহ করতে নার্সিং শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে বেসরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হচ্ছে। বেসরকারি কলেজে পড়ার সুবিধাগুলো হলো উন্নত মানের শিক্ষা, আধুনিক প্রশিক্ষণ, এবং অধিক সুযোগ সুবিধা।
সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং কলেজের মধ্যে পার্থক্য
আমার স্টুডেন্টেরা আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করতো স্যার,সরকারি আর বেসরকারি নার্সিংয়ের মধ্যে পার্থক্য কি? আমি ওদের বুঝতাম এভাবে,
সরকারি নার্সিং কলেজে পড়ার খরচ তুলনামূলকভাবে কম হলেও, বেসরকারি কলেজগুলোতে সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষার মান, এবং শিক্ষার্থীর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী সেগুলোতে ভর্তি হতে আগ্রহী। সরকারি কলেজে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে অনেকেই বেসরকারি কলেজের দিকে ঝুঁকছেন।
তার থেকে বড় কথা হলো সরকারি নার্সিংয়ে চান্স পায়না অনেকে।সেক্ষেত্রে নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় পাশ নম্বর (৪০ মার্ক) পেলেই সে যেকোনো নার্সিংয়ে ভর্তি হতে পারে। সরকারি নার্সিংয়ে ল্যাব এবং অন্যান্য প্রপার্টি অনেক কম থাকে যেটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আবার বেশি থাকতে পারে।
এটিও প্রতিষ্ঠানভাবে আলাদা হতে পারে। যেমন আমি তন্নীর প্রতিষ্টানে পেয়েছিলাম কিন্তু রুপার প্রতিষ্ঠানে পাইনি। আরেকটা বড় সুবিধা সরকারি নার্সিং এর স্টুডেন্টরা পায় তা হলো ওদের পড়তে টাকা কম লাগে লাগে না বললেই চলে উল্টা সরকার থেকে ভাতা পায় প্রতিমাসে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আবার এই সুবিধা পায় না। সরকারি নার্সিং স্টুডেন্ট দেড় ইন্টার্নি করতে আলাদা টাকা খরচ করতে হয় না যেটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লাগে।
নার্সিং ডিগ্রির ধরন এবং সময়কাল
ডিপ্লোমা ইন নার্সিং
ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাধারণত তিন বছর মেয়াদী কোর্স, যা শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করেন। এটি সরকারিতেও যেমন বেসরকারিতে ঠিক তেমন।
বিএসসি ইন নার্সিং
বিএসসি ইন নার্সিং একটি চার বছরের কোর্স, যা পেশাদার নার্স হতে হলে সবচেয়ে উপযুক্ত ডিগ্রি। এই কোর্সে উন্নত প্রশিক্ষণ এবং থিওরেটিক্যাল জ্ঞান প্রদান করা হয়।
বিএসসি ও ডিপ্লোমা নার্সিং এর কোর্স কারিকুলাম সম্পর্কে জানুন।
বেসরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি ফি
ভর্তির সময় প্রাথমিক খরচ
বেসরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হতে গেলে প্রথমেই বেশ কিছু খরচের সম্মুখীন হতে হয়। সাধারণত ভর্তির সময় প্রায় ৫০,০০০ টাকা থেকে ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রাথমিক খরচ হয়ে থাকে। এই খরচের মধ্যে রয়েছে ভর্তি ফি, পরিচয় পত্র, এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ।
পরবর্তী বছরের বার্ষিক খরচ
প্রথম বর্ষের পরে প্রতি বছর প্রায় ৪০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক ফি দিতে হয়। এই খরচের মধ্যে টিউশন ফি, পরীক্ষা ফি, এবং অন্যান্য শিক্ষা সম্পর্কিত খরচ অন্তর্ভুক্ত।
টিউশন ফি: ভিন্ন ভিন্ন কলেজে ভিন্নতা
আমি প্রথমেই বলেছি রুপাকে বাগেরহাটে ভর্তি করেছি এটি জেলা শহর তাই এখানে ভর্তি হতে ওর কম খরচ হয়েছে কিন্তু তন্নীকে খুলনা ভর্তি করতে বেশি টাকা লেগেছে কারণ এটি বিভাগীয় শহর। ঢাকায় ভর্তি হতে অবসসই আরো বেশি টাকা খরচ হয়।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেসরকারি নার্সিং কলেজের ফি তফাৎ
ঢাকার বেসরকারি নার্সিং কলেজগুলোর খরচ সাধারণত বেশি হয়। ঢাকার বাইরের কলেজগুলোর ক্ষেত্রে এই খরচ কিছুটা কম হলেও মানের দিক থেকে ঢাকার কলেজগুলোর সাথে তুলনা করা কঠিন।
উচ্চ মানসম্পন্ন নার্সিং কলেজের টিউশন ফি
উচ্চ মানসম্পন্ন বেসরকারি নার্সিং কলেজের টিউশন ফি সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। এই ধরনের কলেজে বছরে প্রায় ২,০০,০০০ টাকা বা তারও বেশি খরচ হতে পারে।
অন্যান্য খরচ: বই, ইউনিফর্ম, এবং ল্যাব ফি
বই এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের খরচ
নার্সিং শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত বই, নোটস, এবং অন্যান্য সরঞ্জাম প্রায় ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
প্র্যাকটিকাল এবং ল্যাবরেটরি খরচ
নার্সিং শিক্ষায় ল্যাবরেটরি এবং প্র্যাকটিকাল ক্লাসগুলির জন্য আলাদা ফি দিতে হয়। এই খরচ সাধারণত ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
হোস্টেল এবং আবাসন খরচ
কলেজ ক্যাম্পাসের হোস্টেল
অনেক বেসরকারি নার্সিং কলেজ নিজস্ব হোস্টেল সুবিধা প্রদান করে, যেখানে আবাসনের জন্য মাসিক প্রায় ৩,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা খরচ হয়।
বাইরে থাকার ক্ষেত্রে খরচ এবং সুবিধা
যদি শিক্ষার্থী কলেজের বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকে, তবে প্রতিমাসে আনুমানিক ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা খরচ হতে পারে। ঢাকার বাইরে এই খরচ তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে।
শিক্ষার্থী বৃত্তি এবং আর্থিক সহায়তা
সরকারি ও বেসরকারি বৃত্তি প্রোগ্রাম
কিছু বেসরকারি নার্সিং কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদানের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীরা সরকারি বৃত্তি প্রোগ্রামের মাধ্যমে কিছুটা আর্থিক সহায়তা পেতে পারেন।
অন্যান্য উৎস থেকে আর্থিক সহায়তা
বিভিন্ন এনজিও এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে নার্সিং শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তার সুযোগ পাওয়া যায়, যা খরচ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
বেসরকারি নার্সিং কলেজের দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ
নার্সিং পেশায় চাকরির সুযোগ
নার্সিং শিক্ষার পর চাকরির সুযোগ বাংলাদেশে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে নার্সদের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে।
চাকরির বাজারে নার্সিং শিক্ষার মূল্য
নার্সিং শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্থায়ী এবং সুনিশ্চিত চাকরি পেতে পারেন। বেসরকারি নার্সিং কলেজ থেকে স্নাতকরা শুধুমাত্র দেশে নয়, বিদেশেও কাজের সুযোগ পেতে পারেন।
খরচ সাশ্রয়ের উপায়
প্রাথমিক ফি ও অন্যান্য খরচ কমানোর পদ্ধতি
বিভিন্ন বেসরকারি নার্সিং কলেজ খরচ সাশ্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট ছাড় বা আর্থিক সুবিধা প্রদান করে। শিক্ষার্থীরা বৃত্তির জন্য আবেদন করেও কিছুটা খরচ কমাতে পারেন।
বৃত্তি ও অর্থনৈতিক সহায়তা লাভের কৌশল
বৃত্তি পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হবে এবং বিভিন্ন সংস্থার বৃত্তি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে হবে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়
কলেজের মান ও অবকাঠামো বিবেচনা
খরচ ছাড়াও কলেজের মান, অবকাঠামো, এবং শিক্ষার গুণগত মান বিবেচনা করা জরুরি। উন্নত মানের কলেজে বিনিয়োগ করা ভবিষ্যতের জন্য একটি সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে।
খরচ এবং পেশাগত সুযোগের মধ্যে সামঞ্জস্য
শিক্ষার খরচ এবং পেশাগত সুযোগের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। শুধুমাত্র কম খরচ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে ভালো ক্যারিয়ার নিশ্চিত করতে সঠিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা প্রয়োজন।
উপসংহার
আমি আমার শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে গিয়ে যেটি লক্ষ্য করলাম তা হলো, বেসরকারি নার্সিং কলেজে পড়াশোনা করতে গেলে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। নার্সিং পেশায় চাকরির সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যতের সুযোগের জন্য ভালো মানের শিক্ষায় বিনিয়োগ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সঠিক তথ্য নিয়ে এবং বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তার সুযোগ খুঁজে খরচ সামলানো সম্ভব। আরেকটা যে ব্যাপার, ছেলেদের ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিট কম পাওয়া যায় এবং খরচটাও একটু বেশি হয়। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে আমাদের জানাতে পারেন কমেন্ট করে। আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে যুক্ত থাকতে পারেন।
FAQs
বেসরকারি নার্সিং কলেজে পড়ার খরচ কত?
সাধারণত ৩,০০,০০০ থেকে ৮,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়, তবে কলেজের মান এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে এই খরচ ভিন্ন হতে পারে।
বেসরকারি কলেজে পড়ার সময় কী ধরনের বৃত্তি পাওয়া যায়?
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করে, যা খরচের একটা বড় অংশ কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে সাধারণত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বৃত্তি পাওয়া যায় না। তারপরও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে বৃত্তি প্রদান করে থাকে।
নার্সিং পড়ার পরে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কেমন?
বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নার্সদের জন্য প্রচুর চাকরির সুযোগ রয়েছে। তাই নার্সিং ডিগ্রি একটি সুনিশ্চিত পেশা গড়ার উপায়।
ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরের নার্সিং কলেজে খরচ কেমন?
ঢাকার বাইরের কলেজগুলোর খরচ তুলনামূলকভাবে কম, তবে মানের দিক থেকে কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে।
বেসরকারি নার্সিং কলেজে পড়তে গেলে কী কী সরঞ্জাম প্রয়োজন?
নার্সিং পড়ার জন্য নির্দিষ্ট বই, ইউনিফর্ম, এবং প্র্যাকটিকাল ল্যাব সরঞ্জাম প্রয়োজন, যার জন্য আলাদা খরচ হতে পারে।
নার্সিং এডমিশন একাডেমির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url