হুপিং কাশির ভ্যাকসিন: লক্ষণ, প্রতিরোধ, এবং টিকা পাওয়ার উপায়
শিশুদের টিকাদান: গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও টিকার প্রকারভেদ
পরিচিতি: ডা. সারোয়ার জাহান, এভারকেয়ার হসপিটাল, ঢাকায় পেডিয়াট্রিক ইউরোলজিতে সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছি। এখানে শিশুদের টিকা সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরছি।
টিকার ভূমিকা ও কার্যপ্রণালী
মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই লক্ষ্য করেছে, কিছু সংক্রমণ একবার হলে তা দ্বিতীয়বার সহজে হয় না। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে টিকা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। যখন কোনো জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে, তখন আমাদের রক্তে কিছু বিশেষ মেমরি সেল তৈরি হয়। এই সেলগুলো থেকে প্রোটিন উৎপন্ন হয় যা জীবাণুকে মেরে ফেলে। সাধারণত একটি টিকা বারবার দেওয়া হয়, কারণ প্রথম ডোজ মেমরি সেল তৈরি করে এবং পরের ডোজগুলো তা আরও সক্রিয় করে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেয়।
টিকার ধরন: ইপিআই ও অন্যান্য
টিকাগুলোকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়—
- ইপিআই (Expanded Program on Immunization)
- অন্যান্য
বাংলাদেশের ইপিআই প্রোগ্রাম খুবই শক্তিশালী এবং এটি সরকার বিনামূল্যে টিকা প্রদান করে। ইপিআই প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিকা হলো:
- ডিপথেরিয়া
- টিটেনাস
- হুপিং কাশি (পারটুসিস)
- হেপাটাইটিস বি
- নিউমোকক্কাস ও হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বি
ইপিআই টিকার কার্যকারিতা ও সফলতা
ইপিআই প্রোগ্রাম আমাদের দেশে এতটাই কার্যকর যে, গত ৩০ বছরে আমি কোনো ডিপথেরিয়া কেস দেখিনি। এছাড়াও, পোলিওমায়েলাইটিস এখন প্রায় বিলুপ্ত। এটি আমাদের ভ্যাকসিনেশনের অন্যতম বড় সফলতা।
অতিরিক্ত টিকা: কেন প্রয়োজন?
ইপিআই প্রোগ্রামের বাইরেও কিছু টিকা রয়েছে, যা কিনতে হয় এবং সরকার এখনো এগুলো বিনামূল্যে সরবরাহ করতে সক্ষম হয়নি। এই অতিরিক্ত টিকার মধ্যে বিশেষ কয়েকটি হলো:
- চিকেন পক্স: সাধারণত জ্বর ও ফোসকা পড়ে, যা মস্তিষ্কের সংক্রমণও ঘটাতে পারে। এই টিকা শিশুরা পেতে পারে।
- হেপাটাইটিস এ: এটি জন্ডিসের কারণ এবং কিছু ক্ষেত্রে লিভার নষ্ট করতে পারে।
- ম্যানিনজাইটিস ভ্যাকসিন: ব্রেনের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।
- মাম্পস ভ্যাকসিন: প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে, তাই টিকাটি গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ টিকা
আরও কিছু টিকা রয়েছে যা আমাদের দেশে বর্তমানে বেসরকারি পর্যায়ে প্রচলিত, যেমন:
রোটাভাইরাস: এটি শিশুদের ডায়রিয়ার একটি সাধারণ কারণ। এই টিকাটি শিশুদের ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়।
টাইফয়েড ভ্যাকসিন: পানিবাহিত টাইফয়েড রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
এইচপিভি ভ্যাকসিন: জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে, সাধারণত ১০ বছরের বেশি বয়সের মেয়ে শিশুদের দেওয়া হয়।
উন্নত দেশে ডিপিটি ভ্যাকসিনের ধারা
উন্নত দেশগুলোতে ডিপিটি ভ্যাকসিন সাধারণত ৫ বছর এবং ১০ বছর বয়সে পুনরায় দেওয়া হয়। এতে সুরক্ষা আরও দৃঢ় হয় এবং শিশুরা সুস্থ থাকে।
টিকা সম্পর্কে ভুল ধারণা ও সঠিক তথ্য
অনেকেই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। তবে, বেশিরভাগ টিকা নিরাপদ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সামান্য। সাধারণত টিকা দেওয়ার পর সামান্য জ্বর বা ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা হতে পারে।
উপসংহার:
টিকা শুধুমাত্র আপনার শিশুকে নয়, সমাজকেও সুরক্ষিত রাখে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক টিকা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নার্সিং এডমিশন একাডেমির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url