রাশিয়ার আকাশে গ্রহাণুর আছড়ে পড়া: প্রভাব ও বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ
আশঙ্কাই সত্যি হল, 70 সেন্টিমিটার ব্যাসের এক গ্রহাণু আছড়ে পড়ল পৃথিবীর বুকে।
গতকাল রাতে স্থানীয় সময় ১:১৫-এ রাশিয়ার ইয়াকুতিয়ার আকাশে এক বিস্ফোরণ ঘটে। জানা গেছে, ৭০ সেন্টিমিটার ব্যাসের একটি গ্রহাণু আবিষ্কারের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। এর ফলে রাতের আকাশে দেখা যায় এক দৈত্যাকার আগুনের গোলা। তবে, এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে বিভক্তি ও প্রভাব
গ্রহাণুটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই একাধিক খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। খণ্ডগুলি রাশিয়ার বিস্তৃত বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। পাথরগুলির ছোট আকার এবং অবস্থানের কারণে কোনও বড় ধরনের প্রভাব বা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এই বিষয়টি বিজ্ঞানীদের স্বস্তি দিয়েছে।
পূর্বের গ্রহাণুর সংঘর্ষের উদাহরণ
এটি প্রথমবার নয়; এর আগে ২০২২ সালে 2022 WJ202361 এবং ২০২৪ সালে 2024 BS61 নামের গ্রহাণুগুলিও একইভাবে পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল। তবে, সেক্ষেত্রেও কোনও বড়সড় বিপদ ঘটেনি।
পৃথিবীর বিবর্তনে গ্রহাণুর ভূমিকা
বিজ্ঞানীদের মতে, অতীতেও পৃথিবীতে বহুবার এই ধরনের গ্রহাণু আছড়ে পড়েছে। পৃথিবীর বিবর্তনে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাগৈতিহাসিক যুগে ডাইনোসরদের বিলুপ্তির অন্যতম কারণ হিসেবে গ্রহাণুর আঘাতকেই মনে করা হয়।
মানব সভ্যতার ধ্বংস নিয়ে জল্পনা
সাম্প্রতিক সময়ে বহুবার গ্রহাণুর সংঘর্ষের সম্ভাবনা নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা শোনা গিয়েছে। যদিও এই সংঘর্ষের সম্ভাবনা খুবই কম। তবে, অন্য গ্রহের মহাকর্ষীয় টানের কারণে কখনও কখনও তারা পৃথিবীর অনেকটা কাছাকাছি চলে আসে।
গ্রহাণু পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা
নাসা এবং অন্যান্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নিয়মিতভাবে এই ধরনের গ্রহাণুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন। শুধু তাই নয়, গ্রহাণুর পাথুরে শরীর থেকে উপাদান সংগ্রহ করার পাশাপাশি পৃথিবীর দিকে আসা গ্রহাণুকে ধাক্কা দিয়ে তার গতি পরিবর্তনের প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করছেন।
এই বিশেষ গ্রহাণুর ক্ষেত্রে প্রযুক্তি প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা
এদিনের গ্রহাণুটির ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হয়নি। কারণ, আবিষ্কারের মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই এটি পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে। তার ফলেই আগুনের গোলার আকৃতি নিয়ে আকাশে বিস্ফোরিত হয়।
সবশেষে, এ ধরনের গ্রহাণু থেকে বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিজ্ঞানীরা যেমন সচেষ্ট, তেমনই আমাদেরও সচেতন থাকতে হবে। তবে বর্তমানে যা ঘটেছে, তা আমাদের সৌরজগতের এই রহস্যময় আগন্তুকদের আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ এনে দেয়।
বন্ধুরা, এই ছোট্ট তথ্যটি আপনাদের কাজে লাগবে আশা করি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আবার দেখা হবে। টাটা!
পৃথিবীতে গ্রহাণুর আছড়ে পড়া নিয়ে সাধারণ প্রশ্নাবলী
১. এ ধরনের ছোট আকারের গ্রহাণু কি পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক?
না, ৭০ সেন্টিমিটার বা তার আশপাশের আকারের গ্রহাণু সাধারণত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই পুড়ে যায় বা ভেঙে ছোট খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। এ কারণে এটি সাধারণত বড় ধরনের ক্ষতি করে না।
২. গ্রহাণু কত ঘন ঘন পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে?
ছোট গ্রহাণু প্রায় প্রতিদিনই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তবে এগুলোর বেশিরভাগই পুড়ে যায়। উল্লেখযোগ্য আকারের গ্রহাণু আছড়ে পড়ার ঘটনা অনেক বিরল এবং সাধারণত কয়েক দশক বা শতকে একবার ঘটে।
৩. ডাইনোসরদের বিলুপ্তিতে কি গ্রহাণুর ভূমিকা ছিল?
হ্যাঁ, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রায় ৬.৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে আছড়ে পড়া একটি বিশাল গ্রহাণুর প্রভাবেই ডাইনোসরসহ বহু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছিল। এটি পৃথিবীর পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল।
৪. গ্রহাণুর গতিবিধি কীভাবে নজরদারি করা হয়?
নাসা এবং অন্যান্য মহাকাশ সংস্থা উন্নত টেলিস্কোপ এবং মহাকাশযান ব্যবহার করে গ্রহাণুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। পাশাপাশি পৃথিবীর দিকে আসা বিপজ্জনক গ্রহাণু শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত স্ক্যান চালানো হয়।
৫. পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণু থামানোর কোনও ব্যবস্থা আছে কি?
হ্যাঁ, বিজ্ঞানীরা “প্ল্যানেটারি ডিফেন্স” প্রকল্পের আওতায় গ্রহাণুর গতি পরিবর্তন করতে ধাক্কা দেওয়ার বা বিকল্প উপায়ে এড়ানোর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। তবে সব গ্রহাণুর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়, যেমন দ্রুত গতির বা হঠাৎ আবিষ্কৃত গ্রহাণু।
নার্সিং এডমিশন একাডেমির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url