সময়ের কাজ সময়ে করার ৫ কৌশল: সময় ব্যবস্থাপনা ও প্রোডাক্টিভিটি টিপস
সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব: সময়ের কাজ সময়ে করার ৫ কৌশল
১৯৩০ থেকে চল্লিশের দশকের ঘরে একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিজেকে একটি গুহার মধ্যে আবদ্ধ করেন। তিনি শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস সংযুক্ত করেন। তবে তিনি কোনো ঘড়ি রাখেননি। তার উদ্দেশ্য ছিল দুইটি বিষয় পরীক্ষা করা: আমাদের শরীরের মধ্যে প্রাকৃতিক কোনো ঘড়ি বা ইন্টারনাল ক্লক আছে কি না এবং যদি থাকে, তাহলে সেই ক্লক অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার দিন-রাতে কোন সময়টি খাদ্যগ্রহণ, ব্যায়াম, পড়াশোনা, এবং ঘুমের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
বিজ্ঞানী বেয়াল্লিশ দিন ধরে স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তার এই গবেষণায় আরও কয়েকজন ছাত্র অংশ নেন। গবেষণার শেষে তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করেন।
বর্তমান প্রজন্ম এবং সময় ব্যবস্থাপনা
আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, বর্তমানের ছেলেমেয়েরা অল্প বয়সেই অত্যন্ত হাইপারঅ্যাকটিভ, জেদি, এবং অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এর প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা স্ক্রিনটাইমকে চিহ্নিত করেছেন।
স্ক্রিনটাইমের প্রভাব
স্ক্রিন থেকে আসা ব্লু রে মস্তিষ্কের একটি উপাদান মেলানোপসিনকে উদ্দীপিত করে, যা মেলাটোনিনের বিপরীত। মেলাটোনিন আমাদের ঘুমাতে সাহায্য করে, আর মেলানোপসিন ঘুমকে বাধাগ্রস্ত করে।
বিশ্বে ঘুমের অভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হলো দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান। এই দুই দেশে সুইসাইড রেটও সবচেয়ে বেশি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ঘুম ঠিকমতো না হলে দেহে স্ট্রেস বাড়ে, প্রোডাক্টিভিটি কমে, ডিপ্রেশন বেড়ে যায় এবং সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি তৈরি হয়।
ঘুমের ঘাটতির প্রভাব: সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
২০১৯ সালে পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে দুইটি ছাত্র গ্রুপের ওপর গবেষণা করা হয়। একটি গ্রুপকে পর্যাপ্ত ঘুমানোর সুযোগ দেওয়া হয় এবং আরেকটি গ্রুপকে পাঁচ ঘণ্টার কম সময় ঘুমানোর জন্য বাধ্য করা হয়। দেখা যায়, কম ঘুমানো গ্রুপের মেমোরি, রক্তের গ্লুকোজ লেভেল, এবং শরীরের বিভিন্ন হরমোনের ব্যালেন্স নষ্ট হয়।
লেপটিন ও গ্রেলিনের ভূমিকা
লেপটিন এবং গ্রেলিন হরমোনের অনিয়ম হলে কার্বোহাইড্রেটের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়, যা রক্তে গ্লুকোজ লেভেল বাড়িয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিস, ওবেসিটি ও হাই ব্লাড প্রেসারের মতো রোগ সৃষ্টি করে।
সঠিক ঘুমের গুরুত্ব
২০১৫-১৭ সালে হংকং ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র এক রাতের ঘুমের ব্যাঘাতেও ডিএনএ পরিবর্তন ঘটে। ঘুমের অভাব ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য একটি বড় কারণ।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রথম তিন থেকে পাঁচ বছর শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বেশি স্ক্রিনটাইম ব্রেন সেল সংকোচন ঘটায় এবং মেমোরি ড্যামেজ করে। ফলে ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি এবং মেজাজ খারাপের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
ড. ন্যাথানিয়েল ক্লেইনের আবিষ্কার
গুহায় বেয়াল্লিশ দিন থাকার সময় ড. ন্যাথানিয়েল ক্লেইন দেখেন, রাত ৯-১০টার মধ্যে শরীরে মেলাটোনিন ক্ষরণ শুরু হয়। রাত ১২টা থেকে ভোর ৩টা পর্যন্ত গভীর ঘুমের পর্যায় চলে। ভোর ৪টা থেকে কর্টিসল লেভেল বাড়তে শুরু করে, যা সক্রিয় হওয়ার সংকেত দেয়।
দিনের সেরা সময় ব্যবস্থাপনার টিপস
সকাল ৪টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ব্রেনের আলফা ফ্রিকোয়েন্সি (৮-১২ হার্টজ) সক্রিয় থাকে, যা পড়াশোনার জন্য উপযুক্ত সময়। সকালে নাস্তা করা, বিকালে ব্যায়াম করা এবং রাতে ৮:৩০-৯টার মধ্যে ঘুমানো শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী।
উপসংহার
আধুনিক জীবনযাত্রায় ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকা এবং আল্লাহ প্রদত্ত ইন্টারনাল ক্লকের নির্দেশনা মেনে চলা আমাদের সুস্থ, সুখী ও কর্মক্ষম জীবনযাপনে সহায়ক।
FAQS
১. কেন সময় ব্যবস্থাপনা এত গুরুত্বপূর্ণ?
সময় ব্যবস্থাপনা আমাদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে, মানসিক চাপ কমায় এবং আমাদের জীবনে ভারসাম্য আনে।
২. ঘুমের ঘাটতি আমাদের শরীর ও মস্তিষ্কে কীভাবে প্রভাব ফেলে?
ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয় এবং ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার, ওবেসিটির ঝুঁকি বাড়ে।
৩. স্ক্রিনটাইম কমানোর জন্য কী করা উচিত?
স্ক্রিন ব্যবহার সীমিত করা, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে। বিকল্প হিসেবে বই পড়া বা ধ্যান করার চেষ্টা করুন।
৪. কোন সময়ে পড়াশোনা সবচেয়ে উপকারী?
ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত পড়াশোনার জন্য আদর্শ সময়, কারণ তখন মস্তিষ্কের আলফা ফ্রিকোয়েন্সি সক্রিয় থাকে।
৫. ঘুমানোর সেরা সময় কোনটি?
রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ঘুমানো শুরু করলে গভীর ঘুমের পর্যায় (ডিপ স্লিপ) সহজে পাওয়া যায় এবং সকালের জন্য শরীর প্রস্তুত থাকে।
নার্সিং এডমিশন একাডেমির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url