NursingadmissionacademyPostAd

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ, কত সালে ভাঙ্গা হয়, এবং বর্তমান অবস্থা

জানুন বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ, ১৯৯২ সালে মসজিদ ভাঙার ঘটনাসহ এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। আবিষ্কার করুন বাবরি মসজিদের বর্তমান অবস্থা এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় ও রামমন্দির নির্মাণের অগ্রগতি।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ, কত সালে ভাঙ্গা হয়, এবং বর্তমান অবস্থা

বাবরি মসজিদ: ইতিহাস, ধ্বংস এবং বর্তমান অবস্থা

পানিপথের প্রথম যুদ্ধ

তারিখটা ১৫২৬ সালের ২১ এপ্রিলজহির উদ্দীন মোহাম্মদ বাবরের কাছে পরাজিত হলেন দিল্লির শাসক ইবরাহিম লোদী। শুরু হল ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের যুগ। এর ঠিক বছর দুয়েক পরে, অযোধ্যায় নির্মিত হয় একটি মসজিদ। এটি তৈরি করেন বাবরের অন্যতম সেনাপতি মীর বাকি।

এই সেই অযোধ্যা, যা রামায়ণ অনুযায়ী ভগবান রামচন্দ্রের জন্মভূমি বলে পরিচিত। প্রায় ৪০০ বছর ধরে এই মসজিদে নামাজ চলেছে। পাশাপাশি পাশের চবুতরায় চলত পূজাপাঠ ও কীর্তন। অযোধ্যার মানুষে মানুষে কোনও বিভেদ তৈরি করেনি এই ঘটনা। তবে, এই মসজিদের নাম ‘বাবরি মসজিদ’ হল কি না, তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠাতা মীর বাকি তার সম্রাট বাবরের নামেই এই মসজিদের নামকরণ করেন।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ

বাবরি মসজিদের ধ্বংসের পেছনে একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, ১৮৫৩ সালে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি দাবি থেকে এই বিতর্ক শুরু হয়। তাদের অভিযোগ ছিল, বাবরের আমলে একটি প্রাচীন মন্দির ভেঙে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল।

এরপর ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে রাম-সীতার মূর্তি স্থাপন করা হয়, যা থেকে বিতর্ক আরও গভীর হয়। স্বাধীন ভারতের রাজনীতিতে ধর্মীয় ইস্যুগুলো ধীরে ধীরে গুরুত্ব পেতে শুরু করে। ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে এই বিতর্ককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মন্দির নির্মাণের দাবিতে প্রচারণা চালানো হয়।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদের ধ্বংস ঘটে। এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল বিজেপি এবং হিন্দু সংগঠনগুলোর তীব্র আন্দোলন। তাদের মতে, ওই স্থানটি ছিল ভগবান রামের জন্মস্থান এবং সেখানে মন্দির পুনর্নির্মাণ করতে হবে।

গোলমালের সূত্রপাত

গোলমাল শুরু হয় ১৮৫৩ সালে। তখন দিল্লিতে মুঘল শাসন ব্রিটিশদের দয়ায় টিমটিম করে চলছে। নিজেদের মতো করে এলাকার ইতিহাস রচনায় তখন ইংরেজরা বেশ পটু হয়ে উঠেছে। এ সময় প্রথম স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় দাবি তোলে, বাবরের আমলে একটি মন্দির ভেঙে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।

এর মাঝেই ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ঘটে, যা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে পরিচিত। বিদ্রোহ দমন করার পরে, ১৮৫৯ সালে ব্রিটিশরা বাবরি মসজিদের চারপাশে বেড়া দেয়। নিয়ম করে, মুসলমানরা মসজিদে নামাজ পড়বে আর হিন্দুরা বেড়ার বাইরে থেকে পূজা করতে পারবে। এভাবেই ৯০ বছর চলল। কিন্তু তত দিনে বাবরি মসজিদের গায়ে বিতর্কের ছাপ লেগে গেছে।

বাবরি মসজিদ কত সালে ভাঙ্গা হয়?

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। সেদিন ভূমি পূজার নামে বিজেপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা মসজিদের উপরের অংশ ভেঙে ফেলেন। এই ঘটনার আগে থেকেই সেখানে হাজার হাজার কর্মী জড়ো হয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনী তখন নির্বিকার ছিল।

এটি ছিল একটি পরিকল্পিত আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপ। এর পেছনে ছিল রামমন্দির নির্মাণের জোরালো দাবি। মসজিদ ধ্বংসের পরে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাবরি বিতর্ক

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভক্ত হয়। এর দু'বছর পর, ১৯৪৯ সালের ২২ ডিসেম্বর গভীর রাতে মসজিদের ভেতরে রাম-সীতার মূর্তি রেখে আসেন জনৈক হিন্দু পুরোহিত।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও উপ-প্রধানমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এই ঘটনায় অত্যন্ত বিরক্ত হন। মূর্তি সরানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু স্থানীয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের একক সিদ্ধান্তে মূর্তি সরানো হয়নি। শেষমেশ পরিস্থিতি শান্ত করতে মসজিদের তালা ঝুলিয়ে দেয় সরকার। বন্ধ হয়ে যায় নামাজ।

বিচার প্রক্রিয়ার সূচনা

১৯৫০ সালে রামের পূজা ও মূর্তি স্থাপনের দাবিতে ফৈজাবাদের আদালতে দেওয়ানি মামলা করা হয়। ১৯৬১ সালে মূর্তি অপসারণ ও মসজিদের অধিকার ফিরে পেতে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড মামলা করে। ১১ বছরের মধ্যে এ নিয়ে চারটি মামলা হয়, যা চলতে থাকে বছরের পর বছর।

১৯৮৬ সালে আদালত মসজিদের তালা খোলার নির্দেশ দেয়। এর সঙ্গে সঙ্গেই রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার তালা খোলার অনুমতি দেয়।

বাবরি মসজিদের বর্তমান অবস্থা

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে, দীর্ঘদিন ধরে এই স্থানের ভাগ্য নিয়ে আইনি লড়াই চলে। অবশেষে, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে বাবরি মসজিদ এলাকা রামমন্দির নির্মাণের জন্য রাম জন্মভূমি ট্রাস্টকে হস্তান্তর করে।

সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, মসজিদ নির্মাণের জন্য অযোধ্যার অন্যত্র পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করা হয়। বর্তমানে, বাবরি মসজিদের স্থানে রামমন্দির নির্মাণ কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২০ সালের ৫ আগস্ট রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও মন্দিরের কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি, এটি আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সারাংশ

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ভারতীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এটি শুধু ধর্মীয় ইস্যু নয়, বরং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন। বর্তমানে বাবরি মসজিদের স্থান রামমন্দিরের নির্মাণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করছে।

প্রশ্নোত্তর (FAQs):

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ কী ছিল?

বাবরি মসজিদের ধ্বংসের পেছনে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রধান কারণ। রামমন্দির নির্মাণের দাবিতে এটি ভেঙে ফেলা হয়।

বাবরি মসজিদ কত সালে ভাঙ্গা হয়?

বাবরি মসজিদ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ধ্বংস করা হয়।

বাবরি মসজিদের বর্তমান অবস্থা কী?

বাবরি মসজিদের স্থানে বর্তমানে রামমন্দির নির্মাণ চলছে।

বাবরি মসজিদ বিতর্ক কীভাবে শুরু হয়?

এটি শুরু হয় ১৮৫৩ সালে, যখন হিন্দু সম্প্রদায় দাবি করে বাবরের আমলে একটি মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল।

রামমন্দির নির্মাণের কাজ কবে শেষ হবে?

রামমন্দির নির্মাণ কাজ ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নার্সিং এডমিশন একাডেমির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url