NursingadmissionacademyPostAd

কুমিল্লা বিভাগ কোথায়: থানা, মানচিত্র ও ঐতিহ্যের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ

কুমিল্লা বিভাগ কোথায়, কুমিল্লা জেলা থানা কয়টি নাম ও কুমিল্লা বিভাগ মানচিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কুমিল্লার গল্প।
কুমিল্লা বিভাগ কোথায়: থানা, মানচিত্র ও ঐতিহ্যের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বাংলাদেশ

স্বরচিত রূপ ও বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। সবুজ বন-বনানী, সুবিশাল ম্যানগ্রোভ বনরাজি, নদ-নদী, বিল, বাঁওড়, হাওর, দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত, শ্যামল সবুজ প্রান্তর, লাল টিলা-পাহাড়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, রঙিন শাক-সবজি, বিচিত্র স্বাদের ফল ও রূপালি ইলিশের জন্য এ দেশ অনন্য। প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির কারণে যুগ যুগ ধরে ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করেছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।

কুমিল্লা বিভাগ কোথায়

তাই কবি-সাহিত্যিকগণ মুগ্ধ হয়ে বাংলাকে "রূপসী বাংলা" বলে আখ্যায়িত করেছেন। আজ আমরা বিউটিফুল বাংলাদেশ অনুষ্ঠানে এসেছি কুমিল্লায়। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং পুরো বাংলার ঐতিহ্যের উজ্জ্বল প্রতীক। খাদি কাপড়ের সূক্ষ্মতা এবং রসমালাইয়ের মিষ্টতায় কুমিল্লা যুগে যুগে বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে।

কুমিল্লা বিভাগ কোথায়?

কুমিল্লা বিভাগ বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রস্তাবিত প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগের অংশ। কুমিল্লা বিভাগের মধ্যে কুমিল্লা জেলা ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চাঁদপুর জেলা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

কুমিল্লা জেলা থানা কয়টি ও তাদের নাম

কুমিল্লা জেলার থানা বা উপজেলা সংখ্যা মোট ১৭টি। এগুলো হলো:

  1. কুমিল্লা আদর্শ সদর
  2. কুমিল্লা সদর দক্ষিণ
  3. দাউদকান্দি
  4. দেবিদ্বার
  5. মেঘনা
  6. হোমনা
  7. তিতাস
  8. মুরাদনগর
  9. বুড়িচং
  10. ব্রাহ্মণপাড়া
  11. চান্দিনা
  12. বরুড়া
  13. লাকসাম
  14. মনোহরগঞ্জ
  15. নাঙ্গলকোট
  16. চৌদ্দগ্রাম
  17. লালমাই

প্রতিটি থানা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত।

কুমিল্লা বিভাগ মানচিত্র: কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

কুমিল্লার মানচিত্র এই জেলার ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিদর্শন তুলে ধরে। এটি বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। মানচিত্রের মাধ্যমে এখানকার নদী, পাহাড়, এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো সহজে চিহ্নিত করা যায়।

কুমিল্লার ঐতিহাসিক পটভূমি ও নামকরণের ইতিহাস

বাংলাদেশের পূর্বপ্রান্তে সীমান্তবর্তী এই সমৃদ্ধ জেলার নাম কুমিল্লা। গোমতী ও তিতাস নদীর বিস্ময়কর বালিয়ারির কারণে এই জেলার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

কুমিল্লার নামকরণ নিয়ে নানা গল্প প্রচলিত। এর পূর্ব নাম ছিল "ত্রিপুরা"। কথিত আছে, ১৪ শতকে ধর্মপ্রচারক শাহ জামাল যখন এ অঞ্চলে আসেন, তখন তাঁর মামা আহমেদ কবীর তাঁকে একটি মুঠো মাটি দিয়ে বলেন, "যে স্থানের মাটি এই মাটির মতো হবে, সেখানেই তোমার ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র হবে।" তিনি কুমিল্লার গাজীপুর এলাকায় মাটির মিল খুঁজে পেয়ে বলেন, "কুমিল্লা! কুমিল্লা!", যার অর্থ কাঙ্ক্ষিত স্থান পাওয়া গেছে। এই কারণেই এলাকাটির নাম "কুমিল্লা" রাখা হয় বলে মনে করা হয়।

কুমিল্লা বিভাগ কোথায়: থানা, মানচিত্র ও ঐতিহ্যের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন

কুমিল্লায় নদী, দিঘি, পাহাড়, এবং মৃৎশিল্প থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী খদ্দর কাপড় এবং বিখ্যাত রসমালাই রয়েছে। এখানে আরও আছে বৌদ্ধবিহার, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মারক এবং প্রাচীন রাজাদের নির্মিত স্থাপনা।

ধর্মসাগর

ধর্মসাগর কুমিল্লা সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি বিশাল মানবসৃষ্ট জলাশয়। ১৪৫৮ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজ ধর্মমাণিক্য এটি খনন করেন। প্রায় ২৪ একর আয়তনের এই জলাশয় কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র। এটি বাংলাদেশের নগর জল ঐতিহ্যের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন।

ধর্মসাগরকে "কুমিল্লার ফুসফুস" বলা হয়। এখানকার মুক্ত বাতাস এবং মনোরম পরিবেশ সকালে হাঁটাচলার জন্য বিশেষ উপযোগী। কবি কাজী নজরুল ইসলামও কুমিল্লা ভ্রমণে এ স্থানে সময় কাটিয়েছেন।

কুমিল্লা বিভাগ কোথায়: থানা, মানচিত্র ও ঐতিহ্যের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ

রানিকুঠি

ধর্মসাগরের উত্তর পাড়ে অবস্থিত রানিকুঠি ত্রিপুরা রাজাদের নির্মিত একটি ঐতিহাসিক বিশ্রামাগার। এটি ১৪৫৮ সালে ধর্মসাগর খননের সময় নির্মাণ করা হয়। এর নির্মাণশৈলী এবং স্থাপত্য এখনও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের স্মরণে নির্মিত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি কুমিল্লার বিখ্যাত একটি স্থান। এটি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের কাছে অবস্থিত এবং প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক এখানে আসেন।

বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব: শচীন দেব বর্মণ

কুমিল্লা শহরের চর্থা এলাকায় শচীন দেব বর্মণের জন্ম। তিনি ছিলেন ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি গানের কিংবদন্তি সুরকার। তাঁর পৈতৃক বাড়িটি এখনও ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষিত।

উপসংহার

কুমিল্লার ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য বাংলার সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। এটি আমাদের অতীত এবং সংস্কৃতির এক জীবন্ত দলিল। বিউটিফুল বাংলাদেশ অনুষ্ঠানের আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি। সবাই ভালো থাকুন।

FAQs About কুমিল্লা বিভাগ

কুমিল্লা বিভাগ কোথায় অবস্থিত?

কুমিল্লা বিভাগ বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে, চট্টগ্রাম বিভাগের অংশ হিসেবে অবস্থিত। এটি সীমান্তবর্তী একটি অঞ্চল।

কুমিল্লা জেলার থানার সংখ্যা কয়টি?

কুমিল্লা জেলায় মোট ১৭টি থানা বা উপজেলা রয়েছে, যার মধ্যে কুমিল্লা সদর ও বুড়িচং উল্লেখযোগ্য।

কুমিল্লা বিভাগের মানচিত্র কীভাবে পাওয়া যাবে?

কুমিল্লা বিভাগের মানচিত্র স্থানীয় প্রশাসন বা অনলাইনে সহজেই পাওয়া যায়। এটি জেলার অবস্থান এবং ঐতিহাসিক স্থান চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।

কুমিল্লা জেলার কোন ঐতিহ্যবাহী খাবার বিখ্যাত?

কুমিল্লার রসমালাই এবং খাদি কাপড় বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। এগুলো জেলার ঐতিহ্যের অংশ।

কুমিল্লার প্রধান দর্শনীয় স্থান কোনগুলো?

কুমিল্লার প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, ধর্মসাগর, রানিকুঠি, এবং বৌদ্ধবিহার।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নার্সিং এডমিশন একাডেমির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url